সবাই হোলি নিয়ে ছবি ভরা পোস্ট দিচ্ছে। কিন্তু হোলি কি? কেন? এ প্রশ্নগুলো কি কারো মাথাতেই খেলছে না? বর্তমান সময়ে রঙের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার,...

হোলি বা দোল উৎসব এর সঠিক ইতিহাস কি? জানা না থাকলে জেনে নিন

By 11:08:00 PM ,

সবাই হোলি নিয়ে ছবি ভরা পোস্ট দিচ্ছে। কিন্তু হোলি কি? কেন? এ প্রশ্নগুলো কি কারো মাথাতেই খেলছে না? বর্তমান সময়ে রঙের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, বিপরীত লিঙ্গীয় মানুষের মাখামাখি এমনকি শ্রীকৃষ্ণ রাধার হোলি মাখা ছবিগুলো দেখে অনেকেই বলেছেন এর নামই কি হোলি?!
দৈত্যরাজ হিরণ্যকিশপুর কাহিনি আমরা সকলে জানি। ভক্ত প্রহ্লাদ অসুর বংশে জন্ম নিয়েও পরম ধার্মিক ছিলেন। তাঁকে যখন বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও হত্যা করা যাচ্ছিল না তখন হিরণ্যকিশপুর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুলে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ হোলিকা এই বর পেয়েছিল যে আগুনে তার কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু অন্যায় কাজে শক্তি প্রয়োগ করায় হোলিকা প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করলে বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ অগ্নিকুণ্ড থেকেও অক্ষত থেকে যায় আর ক্ষমতার অপব্যবহারে হোলিকার বর নষ্ট হয়ে যায় এবং হোলিকা পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়, এই থেকেই হোলি কথাটির উৎপত্তি ।
অন্যদিক বসন্তের পূর্ণিমার এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেশি নামক অসুরকে বধ করেন। কোথাও কোথাও অরিষ্টাসুর নামক অসুর বধের কথাও আছে। অন্যায়কারী, অত্যাচারী এই অসুরকে বধ করার পর সকলে আনন্দ করে। এই অন্যায় শক্তিকে ধ্বংসের আনন্দ মহাআনন্দে পরিণত হয়।
হোলি বা দোল উৎসব এর সঠিক ইতিহাস কি? জানা না থাকলে জেনে নিন

অঞ্চল ভেদে হোলি বা দোল উদযাপনের ভিন্ন ব্যাখ্যা কিংবা এর সঙ্গে সংপৃক্ত লোককথার ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু উদযাপনের রীতি এক ।বাংলায় আমরা বলি ‘দোলযাত্রা’ আর পশ্চিম ও মধ্যভারতে ‘হোলি’,। রঙ উৎসবের আগের দিন ‘হোলিকা দহন’ হয় অত্যন্ত ধুমধাম করে । শুকনো গাছের ডাল, কাঠ ইত্যাদি দাহ্যবস্তু অনেক আগে থেকে সংগ্রহ করে সু-উচ্চ একতা থাম বানিয়ে তাতে অগ্নি সংযোগ করে ‘হোলিকা দহন’ হয় । পরের দিন রঙ খেলা । বাংলাতেও দোলের আগের দিন এইরকম হয় যদিও তার ব্যাপকতা কম – আমরা বলি ‘চাঁচর’ । এই চাঁচরেরও অন্যরকম ব্যাখ্যা আছে । দোল আমাদের ঋতুচক্রের শেষ উৎসব । পাতাঝরার সময়, বৈশাখের প্রতীক্ষা। এই সময় পড়ে থাকা গাছের শুকনো পাতা, তার ডালপালা একত্রিত করে জ্বালিয়ে দেওয়ার মধ্যে এক সামাজিক তাৎপর্য রয়েছে । পুরনো জঞ্জাল, রুক্ষতা, শুষ্কতা সরিয়ে নতুনের আহ্বান হচ্ছে এই হোলি। বাংলায় দোলের আগের দিন ‘চাঁচর’ উদযাপনকে এভাবেই ব্যাখ্যা করা হয় ।
আমাদের অনেক ধর্মীয় উৎসবেই আঞ্চলিক লোক-সংস্কৃতি ও রীতির প্রভাব দেখা যায়, হোলিও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলার দোলযাত্রায় গৌড়ীয় বৈষ্ণব রীতির প্রাধান্য পায়। ঐতিহাসিকরা বিশ্বাস করেন পূর্বভারতে আর্যরা এই উৎসব পালন করতেন । যুগে যুগে এর উদযাপন রীতি পরিবর্তিত হয়ে এসেছে । পুরাকালে বিবাহিত নারী তার পরিবারের মঙ্গল কামনায় রাকা পূর্ণিমায় রঙের উৎসব করতেন ।
দোল হিন্দু সভ্যতার অন্যতম প্রাচীন উৎসব । নারদ পুরাণ, ভবিষ্য পুরাণ ও ‘জৈমিনি মীমাংশা’য় রঙ উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায় । ৩০০ খৃষ্টপূর্বাব্দের এক শিলালিপিতে রাজা হর্ষবর্ধন কর্তৃক ‘হোলিকোৎসব’পালনের উল্লেখ পাওয়া যায় । হর্ষবর্ধনের নাটক ‘রত্নাবলী’তেও হোলিকোৎসবের উল্লেখ আছে । এমনকি আল বেরুণীর বিবরণে জানা যায় মধ্যযুগে কোন কোন অঞ্চলে মুসলমানরাও হোলিকোৎসবে সংযুক্ত হতেন ।
মধ্যযুগের বিখ্যাত চিত্রশিল্পগুলির অন্যতম প্রধান বিষয় রাধা-কৃষ্ণের রঙ উৎসব । এই রাধা-কৃষ্ণকে কেন্দ্র করে হোলির যে অতি বৈষ্ণবীয় আচার তা অবশ্যই প্রশ্নযুক্ত। কেননা এটি শ্রীকৃষ্ণের জীবন ইতিহাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কেননা শ্রীকৃষ্ণ ১০ বছর বয়সে বৃন্দাবন ত্যাগ করার পর সেথানে তার যাওয়াই হয়নি। অন্যদিকে বহু গবেষক রাধার অস্তিত্বকেই অস্বীকার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন থেকে দোল কথার উদ্ভব।
সে যাই হোক রাধা-কৃষ্ণ তত্ত্বকে দাড় করিয়ে বিপরীত লিঙ্গের মাঝে অবাধ হোলি খেলা অবশ্যই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমর্থন যোগ্য নয়। আবার বিষাক্ত রঙের ব্যবহারও উচিত নয়। এমনকি বহু জায়গায় হোলিকা দহনের নামে গাছপালা যথেচ্ছ কেটে ফেলা হয় তাও উচিত নয়। তাই হোলি নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের অসামাজিকতা পরিহার করা জরুরী।
হোলি সম্পর্কে বড়ো একটি তথ্য সকলে এড়িয়ে যায়। ধর্ম ও সমাজ ওতোপ্রোত জড়িত। আর একটি উৎসব বা দিন আরও পবিত্র হয়ে ওঠে যদি উক্ত দিনে পৃথিবী মহান পুরুষের জন্ম দেয়। বাঙালি তথা হিন্দু সমাজের অন্যতম মহাপুরুষ শ্রীচৈতন্যের জন্মতিথি হচ্ছে এই পূর্ণিমা তিথি তথা হোলি তিথি। এই মহান পুরুষের জন্ম উৎসবের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
অন্যায়কে পরাজিত করার আনন্দে সকলের মন রাঙিয়ে উঠুক। মহানপুরুষের আবির্ভাবে সকলের মন আনন্দে নেচে উঠুক অবশ্যই অসামজিকতায় নয়।
আংশিক ঋণস্বীকার : নানা কথায় হোলি, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় সোর্স - BangaliHinduPost

You Might Also Like

0 comments

Advertisement