রামসাগর কোন সাগর নয়, এটি আকার ও সৌন্দয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় দীঘি। দিনাজপুর শহর থেকে ৫ মাইল দক্ষিনে অবস্থিত এ দীঘিটি শুধু জ...

রামসাগর - সবচেয়ে বড় দীঘি

রামসাগর - সবচেয়ে বড় দীঘি
রামসাগর কোন সাগর নয়, এটি আকার ও সৌন্দয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় দীঘি। দিনাজপুর শহর থেকে ৫ মাইল দক্ষিনে অবস্থিত এ দীঘিটি শুধু জলাধার বা ‌ঐতিহাসিক কীর্তি নয়, এক বিশাল প্রাকৃতিক সৌন্দয়ের অধিকারি অর্থাৎ একটি মনোরম পার্ক। পলাশী যুদ্ধের অনতিপূর্বে দিনাজপুরের বিখ্যাত রাজা রামনাথ দীঘিটি খনন করান এবং তার নামেই এর নামকরণ করা হয়।
পাশ্ববর্তী গ্রামগুলোর পানির চাহিদা পূরণের জন্য দীঘিটি খনন করা হয়। বলা হয় যে সেসময় (১৭৫০-১৭৫৫) এ অঞ্চলে প্রচন্ড খরা ও দুর্ভিক্ষ চলছিল ‌এবং রাজা রামনাথ "কাজের বিনিময়ে খাদ্য" কর্মসূচীর মাধ্যমে মানুষদের সাহায্য করেন এবং দীঘিটি খনন করান। এতে প্রায় ১৫ লক্ষ শ্রমিক অংশ নেয় এবং সেসময়ের মূদ্রায় মোট ব্যয় দাড়ায় ৩০,০০০ টাকা।

রামসাগর নামের দীঘিটির চারপাশে সবুজ গাছ-পালায় ভরা। দীঘিটি উত্তর দক্ষিন লম্বা। দীঘিটির জলভাগের দৈর্ঘ্য ১০৩১ মিটার, প্রস্থ ৩৬৪ মিটার ও গভীরতা ৯ মিটার। দক্ষিন দিকের চেয়ে উত্তর দিকের গভীরতা বেশি। দীঘির প্রধান পাকা ঘাট পশ্চিম পাড়ের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত যা সুপ্রশস্থ। এই ঘাট এর দৈর্ঘ্য ১৫০ ফুট প্রস্থ ৬০ ফুট। এছাড়া উত্তর ও দক্ষিন দিকেও একটি করে ঘাট রয়েছে, কিন্তু এই ঘাটগুলি আকারে ছোট।

দীঘির চারদিকে বেশকিছু উচুঁ-উচুঁ টিলা ছিল, তবে এই উচুঁ পাহাড় গুলোর সব আজ আর দেখা যায় না। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এর উচু পাহাড়গুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উত্তর-পূর্ব কোনের সবচে উচুঁ পাহাড়টি আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই পাহাড়টির উচ্চতা সমতল থেকে ৪০ ফুট উচুঁ। দীঘির উত্তর দিকে একটা ধংসম্তপ দেখা যায়, এটা নিয়ে মনুষের নানা প্রশ্ন-নানা কৌতুহল। কেউ বলে এটা মন্দির আবার কেউ বলে রাজার বিশ্রামাগার। দীঘির পশ্চিম পাড়ের ঠিক বিপরীতে একটি ছোটখাট কৃত্রিম চিড়িয়াখানা আছে এবং তাতে চিত্ত বিনোদনের নানা সামগ্রী রয়েছে। উত্তর কোন ও চিড়িয়াখানার মাঝখানে একটি মসজিদও রয়েছে। দীঘির চারদিকে লোকজন হাঁটার জন্য ইট বিছান পথ,মানুষ বসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় সুব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসে রামসাগরের প্রাকৃতিক সৌন্দয় উপভগের জন্য, আবার অনেক মানুষ আসে বনভোজনের জন্য। রামসাগরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন, চোখে না দেখলে।

রামসাগর পর্যটন বিভাগের তত্বাবধানে রয়েছে। পর্যটন কর্পোরেশন এর শ্রী বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ও একটি মনোরম ও আধুনিক বিশ্রামাগার স্থাপন করেছে।

বর্তমান রাজবাড়ি দিনাজপুর শহরের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ধ্বসপ্রাপ্ত নিদর্শন মাত্র। আদিতে প্রতিরক্ষা পরিখা ও উঁচু প্রাচীর বেষ্টিত দিনাজপু...

এক নজরে দিনাজপুর রাজবাড়ী - বাংলাদেশ

বর্তমান রাজবাড়ি দিনাজপুর শহরের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ধ্বসপ্রাপ্ত নিদর্শন মাত্র। আদিতে প্রতিরক্ষা পরিখা ও উঁচু প্রাচীর বেষ্টিত দিনাজপুর রাজবাড়ির বর্তমান পরিত্যক্ত ধ্বংসস্তূপে প্রবেশের জন্য পশ্চিম দিকে একটি উঁচু খিলানপথ রয়েছে। প্রবেশপথের বাম দিকে মূল প্রাসাদ এলাকার মধ্যে খোলা জায়গায় রয়েছে একটি কৃষ্ন মন্দির। ডান দিকে রয়েছে প্রাসাদের বহির্বাটির কিছু ধ্বংসাবশেষ ও অপর একটি প্রবেশপথ যা একটি বর্গাকার চত্বরে উন্মুক্ত হয়েছে।
এটিও পড়ুন -ইংলিশ শেখার দুর্দান্ত বই - ডাইনামিক মেমরি ( ২৫% ছার )

বর্গাকার চত্বরটির পূর্ব পার্শ্বে রয়োছে চত্বরমুখী সমতল ছাদবিশিষ্ট একটি মন্দির।চারটি সেমি-কোরিনথিয়ান স্তম্ভের উপর মন্দিরের সামনের বারান্দা এবং অপর এক সেল কলামের উপর মূল হল ঘরটির ছাদ ন্যস্ত।
এক নজরে দিনাজপুর রাজবাড়ী


দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাসাদটি এখন শুধুই পরিত্যক্ত ইটের সমাহার।ভবনগুলি ভেঙ্গে খন্ড খন্ড হয়ে যাওয়ার শেষ পর্যায়ে উপনীত। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজা ও জমিদার রাজবাড়ির বিভিন্ন অংশ নির্মাণ করলেও মূল প্রাসাদ ভবনটি তিনটি প্রধান মহলে বিন্যস্ত।এগুলি আয়না মহল, রানী মহল ও ঠাকুরবাড়ী মহল হিসেবে পরিচিত।প্রাসাদ এলাকায় বেশ কয়েকটি মন্দি,বেস্ট হাউস, দাতব্য চিকৎসালয়,দিঘি এবং বিভিন্ন কর্মচারী ও পোষ্যদের আবাসস্থল নির্মণ করা হয়েছিল।

এ সকল দালান-কোঠা এবং পূর্ব ও দক্ষিণের দুটি বৃহৎ দিঘি,পরিখা,বাগান,একটি বিলুপ্ত চিরিয়াখানা,একটি টেনিস কোর্ট,কাচারি ও কুমার হাউস-সহ রাজবাড়িটি প্রায় ১৬.৪১ একর নিয়ে বিস্তৃত।মূল মহলও এর সংলগ্ন পরিখা সম্ভবত অষ্টাদশ শতাব্দীতে মহারাজা প্রাণনাথ ও তার পোষ্যপুত্র রামনাথ নির্মাণ করেছিলেন।প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিল ইউরোপীয়, মুসলিম ও হিন্দু রীতির এক অদ্ভুত সংমিশ্রণে, যা খুব একটা দৃষ্টিনন্দন হয় নি।রামডাঙ্গা নামক দুটি সমান্তরাল পরিখা প্রাসাদটি ঘিরে ছিল।পরিখাটি সম্ভবত আলীবর্দী খান এর শাসনামলে রংপুরের ফৌজদার সৈয়দ আহমেদ খানের আক্রমণের পরই রামনাথ খনন করিয়েছিলেন।

আয়না মহল নামে পরিচিত পূর্বমূখী দ্বিতল মূল প্রাসাদটির অধিকাংশই এখন ধসে পড়েছে। এ ধ্বংসাবশেষে অথবা টিকে থাকা সামান্য কিছু নিদর্শনের মাঝে বা চুর্ণ-বিচুর্ণ পাথরের কোথাও এর পূর্বের কাচের মোজাইক চোখে পড়ে না।পূর্বেদিকের ৪৫.৭২ মিটার প্রশস্ত একটি অভিক্ষিপ্ত বারান্দা রয়েছে। ব্যালকনির উভয় পার্শ্বে দুটি প্রশস্ত প্যাঁচানো সিড়ি দোতালায় উঠে গেছে।সম্মুখভাগে অভিক্ক্ষপ্ত বারান্দাটির নিচে রয়েছে গ্রিক আয়োনিক রীতির স্তম্ভের সারি। জোড়ায় জোড়ায় স্থাপিত স্তম্ভেগুলিতে আবার রয়েছে গোলাকৃতির ব্যান্ড। একটি মাত্র আয়তার প্যানেল ব্যতীত উপরের প্যারাপেটটি সমতল।প্যারাপেট থেকে সামান্য উচু আয়তাকার প্যারাপেটিতে রয়েছে রাজকীয় চিহ্নের মাঝে রিলিফ করা মুখোমুখি দুটি হাতি ও মুকুট-এর নকশা।মহলটির মেঝে সাদা-কালো মার্বেল পাথর দ্বারা এবং ছাদ, বিশেষ করে দরবার হল,জলসা হল,তোষাখানা ও পাঠাগার, স্টাকো পদ্ধতিতে চকচকে করা হয়েছে। পশ্চিমের মূল প্রাসাদ ব্লকের পেছোনে রয়েছে রানী মহল ও ঠাকুরবাড়ি মহলের দ্বিতল বর্গাকার ব্লক। একদা এ সমস্ত অসাধারন সুন্দর নিদর্শনের রিলিফ,খোদিত নকশা ও সমস্ত মূল্যবান বস্তই বর্তমানে খুলে নেওয়া হয়েছে।
উৎস-https://dinajpur.net

Advertisement