শচীন রমেশ টেন্ডুলকার জন্ম এপ্রিল ২৪, ১৯৭৩) একজন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার, ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।
শচীনের মাত্র ষোলো বছর বয়সে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় এবং এরপর থেকে প্রায় চব্বিশ বছর তিনি আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলেন। তিনি টেস্ট ক্রিকেট ও একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক শতকের মালিকসহ বেশ কিছু বিশ্বরেকর্ড ধারণ করে আছেন। তিনি প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা ও টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ মিলিয়ে শততম শতক করেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১২ সালের এশিয়া কাপ চারদেশীয় ক্রিকেট ম্যাচে তিনি এই রেকর্ড করেন।
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার ইতিহাসে প্রথম দ্বিশতরানের মালিক তিনি।
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই অক্টোবর, তিনি সমস্ত ধরণের স্বীকৃত ক্রিকেট খেলায় প্রথম ভারতীয় হিসেবে মোট ৫০,০০০ রানের মালিক হন।
২০০২ সালের উইসডেন এর একটি নিবন্ধে তাকে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা টেস্ট ক্রিকেটার এবং ভিভ রিচার্ডসের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা একদিনের ক্রিকেটার বলে অভিহিত করা হয়েছে।
তিনি ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য ছিলেন। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে উইসডেনের দেড়শ বছর উপলক্ষ্যে সর্বকালীন সেরা বিশ্ব টেস্ট একাদশের দলে এক্মাত্র ভারতীয় হিসেবে তাঁর স্থান হয়।
তিনি ১৯৯৭ - ১৯৯৮ সালের জন্য ভারতের খেলাধুলার সর্বোচ্চ পুরস্কার রাজীব গান্ধী খেলরত্ন পুরস্কার এবং ১৯৯৯ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার অর্জন করেন। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার পদ্মভূষণ প্রদান করা হয়। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে আইসিসির পক্ষ থেকে শচীনকে বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে স্যার গারফিল্ড সোবার্স ট্রফি প্রদান করে। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত হন। শচীন প্রথম ভারতীয় খেলোয়াড় যাকে ভারতীয় বিমানবাহিনী মর্যাদাসূচক ক্যাপ্টেন পদ প্রদান করে।
২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে ডিসেম্বর শচীন একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে
এবং ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর মুম্বই শহরের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২০০তম টেস্ট ম্যাচ জয়লাভ করে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
অবসর গ্রহণের কিছুক্ষণ পরেই ভারত সরকার শচীনকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারী ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কার ভারতরত্ন প্রদান করা হবে বলে ঘোষণা করেন।
জন্ম ও শৈশব
১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে এপ্রিল নির্মল নার্সিং হোমে শচীন তেন্ডুলকর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রমেশ তেন্ডুলকর একজন মারাঠি ঔপন্যাসিক ছিলেন। তাঁর মাতা রজনী তেন্ডুলকর বীমা কোম্পানিতে কাজ করতেন। রমেশ বিখ্যাত ভারতীয় সুরকার শচীন দেববর্মণের নামানুসারে তাঁর নাম শচীন রাখেন। শচীনের দুই দাদা নিতিন ও অজিত এবং দিদি সবিতা রমেশের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সন্তান।
প্রথম জীবনে শচীন বান্দ্রা (পূর্ব) অঞ্চলের সাহিত্য সহবাস কো-ওপারেটিভ হাউসিং সোসাইটিতে বসবাস করতেন।
শুরুর ক্রিকেট জীবন
ছোটবেলায় শচীন জন ম্যাকেনরোকে আদর্শ করে টেনিস খেলার প্রতি আকৃষ্ট হলেও তাঁর দাদা অজিত তাঁকে ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে দাদরের শিবাজী পার্ক অঞ্চলে বিখ্যাত ক্রিকেট কোচ রমাকান্ত আচরেকরের কাছে তাঁকে নিয়ে যান। আচরেকরের নির্দেশে দাদরের শচীনকে শারদাশ্রম বিদ্যামন্দির উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়
এবং আচরেকর তাঁকে ক্রিকেটে শিক্ষাদান শুরু করেন।
এই সময় শচীন তাঁর বিদ্যালয়কে মাতুঙ্গা গুজরাটী সেবা মন্ডল শীল্ড জয়ে সহায়তা করেন। এছাড়াও তিনি বোম্বাইয়ের কঙ্গ লীগ প্রতিযোগীতায় জন ব্রাইট ক্রিকেট ক্লাবের হয় এবং পরে ক্রিকেট ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার হয়ে খেলেন।
১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে চৌদ্দ বছর বয়সে মাদ্রাজে এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে ফাস্ট বোলিং করার প্রশিক্ষণ নিতে গেলে অস্ট্রেলিয়ার দ্রুত বোলার ডেনিস লিলি তাঁকে ব্যাটিংয়ে মনোনিবেশ করতে বলেন। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে জানুয়ারী মুম্বইয়ের ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার স্বর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এক প্রদর্শনী ম্যাচে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী ক্রিকেট দলের হয়ে শচীন পরিবর্ত খেলোয়াড় হিসেবে খেলেন। ১৯৮৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে খেলায় তিনি বলবয় হিসেবে সুযোগ পান।
১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তেন্ডুলকর তাঁর খেলা প্রতিটি ইনিংসে শতরান করেন। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর বন্ধু বিনোদ কাম্বলির
সঙ্গে লর্ড হ্যারিস শীল্ড আন্তঃ স্কুল প্রতিযোগিতায় সেন্ট জেভিয়ার্স হাই
স্কুলের বিরুদ্ধে ৬৬৪ রানের রেকর্ড পার্টনারশিপ করেন। এই খেলায় শচীন ঐ
ইনিংসে অপরাজিত ৩২৬ এবং পুরো প্রতিযোগিতায় এক হাজারেরও বেশি রান করেন।
ঘরোয়া ক্রিকেট
১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই নভেম্বর তেন্ডুলকর রঞ্জি ট্রফি প্রতিযোগিতায় মুম্বই ক্রিকেট দলের হয়ে সুযোগ পেলেও কোন ম্যাচে প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ তাঁর হয়নি।
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল ভারত সফর চলাকালীন ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে নেটে প্রশিক্ষণরত ভারতীয় দলের অধিনায়ক কপিল দেবের বলের বিরুদ্ধে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে শচীন সহজেই তাঁকে খেলতে থাকলে মুম্বই ক্রিকেট দলের অধিনায়ক দিলীপ বেঙ্গসরকার তাঁকে মুম্বই দলে প্রথম একাদশে সুযোগ দেন। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই ডিসেম্বর মাত্র পনেরো বছর ২৩২ দিন বয়সে শচীন ঘরোয়া প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে মুম্বই ক্রিকেট দলের হয়ে গুজরাট ক্রিকেট দলের
বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পেয়ে অপরাজিত ১০০ রান করে ভারতের কনিষ্ঠতম
ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকে প্রথম শ্রেণী ক্রিকেট খেলায় শতরানের রেকর্ড
করেন।
এরপর তিনি দেওধর ট্রফি ও দলীপ ট্রফিতেও শতরান করেন।
১৯৮৮-৮৯ মরসুমে শচীন মুম্বইয়ের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন।
এছাড়াও তিনি ১৯৮৯-৯০ মরসুমের শুরুতে ইরানি ট্রফি প্রতিযোগিতায় অবশিষ্ট ভারতের হয়ে দিল্লী ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে অপরাজিত শতরান করেন।
১৯৮৮ ও ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে শচীন দুইবার ইংল্যান্ড সফর করেন।
১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সফরে আসা অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে মুম্বই ক্রিকেট দলের হয়ে প্রথম দ্বিশতরান (২০৪*) করেন।
২০০০ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে রঞ্জি ট্রফি প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে তামিল নাড়ু ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে অপরাজিত ২৩৩ রান করেন।
বিস্তারিত পড়ুন -এখানে
উৎস - wikipedia
জানুয়ারী ২০১৩ সালে একটি পুরস্কার অনুষ্ঠানে তেন্ডুলকর
|
ব্যক্তিগত তথ্য |
পূর্ণ নাম |
শচীন রমেশ তেন্ডুলকর |
জন্ম |
২৪ এপ্রিল ১৯৭৩ (বয়স ৪১)
বোম্বে, মহারাষ্ট্র, ভারত |
ডাকনাম |
মাস্টার ব্লাস্টার, তেন্ডলয়া, লিটল মাস্টার |
উচ্চতা |
৫ ফুট ৫ ইঞ্চি (১৬৫ সেন্টিমিটার) |
ব্যাটিংয়ের ধরণ |
ডান-হাতি |
বোলিংয়ের ধরণ |
ডান-হাতি লেগ স্পিন, অফ স্পিন, মিডিয়াম পেস |
ভূমিকা |
ব্যাটসম্যান |
আন্তর্জাতিক তথ্য |
জাতীয় পার্শ্ব |
|
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ১৮৭) |
১৫ নভেম্বর ১৯৮৯ বনাম [[পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দল|পাকিস্তান]] |
শেষ টেস্ট |
১৪ নভেম্বর ২০১৩ বনাম [[ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় ক্রিকেট দল|ওয়েস্ট ইন্ডিজ]] |
ওডিআই অভিষেক (ক্যাপ ৭৪) |
১৮ ডিসেম্বর ১৯৮৯ বনাম পাকিস্তান |
শেষ ওডিআই |
১৮ মার্চ ২০১২ বনাম [[পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দল|পাকিস্তান]] |
ওডিআই শার্ট নং |
১০ |
একমাত্র টি২০আই (ক্যাপ ১১) |
১ ডিসেম্বর ২০০৬ বনাম [[দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় ক্রিকেট দল|দক্ষিণ আফ্রিকা]] |
ঘরোয়া দলের তথ্য |
বছর |
দল |
১৯৮৮ |
ক্রিকেট ক্লাব অফ ইন্ডিয়া |
১৯৮৮-২০১৩ |
মুম্বই |
১৯৯২ |
ইয়র্কশায়ার |
২০০৮-২০১৩ |
মুম্বই ইন্ডিয়ানস |
কর্মজীবনের পরিসংখ্যান |
প্রতিযোগিতা |
টেস্ট |
ওডিআই |
এফসি |
এলএ |
ম্যাচ সংখ্যা |
২০০ |
৪৬৩ |
৩১০ |
৫৫১ |
রানের সংখ্যা |
১৫,৯২১ |
১৮,৪২৬ |
২৫,৩৯৬ |
২১,৯৯৯ |
ব্যাটিং গড় |
৫৩.৭৮ |
৪৪.৮৩ |
৫৭.৯২ |
৪৫.৫৪ |
১০০/৫০ |
৫১/৬৮ |
৪৯/৯৬ |
৮১/১১৬ |
৬০/১১৪ |
সর্বোচ্চ রান |
২৪৮* |
২০০* |
২৪৮* |
২০০* |
বল করেছে |
৪,২৪০ |
৮,০৫৪ |
৭,৫৬৩ |
১০,২৩০ |
উইকেট |
৪৬ |
১৫৪ |
৭১ |
২০১ |
বোলিং গড় |
৫৪.১৭ |
৪৪.৪৮ |
৬২.১৮ |
৪২.১৭ |
ইনিংসে ৫ উইকেট |
০ |
২ |
০ |
২ |
ম্যাচে ১০ উইকেট |
০ |
- |
০ |
- |
সেরা বোলিং |
৩/১০ |
৫/৩২ |
৩/১০ |
৫/৩২ |
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং |
১১৫/– |
১৪০/– |
১৮৬/– |
১৭৫/– |
|
উত্স: ক্রিকইনফো, ১৬ নভেম্বর ২০১৩ |