জ্যোৎস্না আলোকিত রাতে সুসজ্জিত বাগানে একাকী বিষণ্ণ মনে বসে আছেন রাজকুমারী ঊষা। গতকাল রাতে তিনি স্বপ্নে দেখেছেন, সাদা পক্ষীরাজ ঘোড়ায় করে এ...

বাণগড় সম্পর্কিত ইতি পুরান

 জ্যোৎস্না আলোকিত রাতে সুসজ্জিত বাগানে একাকী বিষণ্ণ মনে বসে আছেন রাজকুমারী ঊষা। গতকাল রাতে তিনি স্বপ্নে দেখেছেন, সাদা পক্ষীরাজ ঘোড়ায় করে এক অপরূপ রাজপুত্র তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। তাকে প্রথম দেখেই প্রেমে পড়েছেন বাণ রাজার কন্যা। প্রেমে ব্যাকুল ঊষা পুনর্ভবার তীরে রাজ উদ্যানে বসে স্বপ্নে দেখা সেই সুদর্শন রাজপুত্রের কথাই ভাবছিলেন। এমন সময়ে তার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটল। সখী চিত্রাঙ্গদা এসেছেন। চিত্রাঙ্গদা জানালেন রাজদরবারে এক সুপুরুষ রাজপুত্র এসেছেন মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে। চিত্রাঙ্গদার বার্তা শুনে ঊষার দক্ষিণ বাহু কাঁপল। হঠাৎ বাম বাহু কাঁপায় শঙ্কিত, উদ্বিগ্ন ও আশান্বিত ঊষা রাজদরবারে গেলেন। দূর থেকে যা দেখলেন, তাতে স্তম্ভিত তিনি—“এ তো সেই, যাকে আমি স্বপ্নে দেখেছি!” বাকরুদ্ধ হলেন রাজকন্যা। এর পরে সখী চিত্রাঙ্গদাকে নিজের মনের কথা জানালেন ঊষা।


অনিরুদ্ধ, দ্বারকার রাজা শ্রীকৃষ্ণের নাতি। এসেছিলেন বাণরাজার সঙ্গে দেখা করতে, কৃষ্ণের দৌতকার্য করতে। অনিরুদ্ধের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণ বাণরাজাকে বার্তা পাঠিয়েছিলেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বাণরাজা যেন পাণ্ডবদের পক্ষ নিয়ে সাহায্য করেন। কিন্তু শিবের উপাসক বাণরাজা ছিলেন কৌরবদের পক্ষে। অনিরুদ্ধের প্রস্তাব পত্রপাঠ প্রত্যাখ্যান করে তাকে বিদায় করেন বাণরাজা। ফিরে যাবেন অনিরুদ্ধ। এমন সময় তার কক্ষে চিত্রাঙ্গদার প্রবেশ। “রাজকুমারী ঊষা আপনার সঙ্গে দেখা করতে উদগ্রীব। অনুগ্রহ করে আজ সন্ধায় তার প্রিয় বাগানে এক বার দেখা করে যাবেন।” চিত্রাঙ্গদার এমন আর্জিকে উপেক্ষা করতে পারেননি অনিরুদ্ধ। সে দিন যদি এই অনুরোধ উপেক্ষা করতেন অনিরুদ্ধ তাহলে ইতিহাস ও পুরাণের অনেক কাহিনীকে আজ নতুন রূপেপাওয়া যেত। যাই হোক, দ্বারকায় ফেরার আগে লাস্যময়ী চিত্রাঙ্গদার কাতর অনুরোধে সন্ধেয় পুনর্ভবার তীরে সুসজ্জিত বাগানে ঊষার সঙ্গে দেখা করতে যান অনিরুদ্ধ। গোলাপ, টিউলিপ, টগর ও নাম না জানা নানান রকমের ফুলে সুসজ্জিত, সুরোভিত বাগানের একপাশে কে ও, বসে আছেন? ঊষা মুখ ফেরাতেই হতবাগ অনিরুদ্ধ! আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা এখানে! অনিরুদ্ধ ও ঊষা দু’জনেই বাকরুদ্ধ। দু’জনেই নিজের নিজের স্বপ্নে দু’জনকে এত দিন দেখেছেন। আজ যখন বাস্তবিক সামনে দেখছেন কথা ফুরিয়ে গিয়েছে দুই প্রেমিকের। তার পর ওই রাতেই ঊষাকে সঙ্গে নিয়ে দ্বারকার উদ্দেশে পালিয়ে যান অনিরুদ্ধ। অনিরুদ্ধ ঊষাকে নিয়ে যখন মাঝ রাস্তায়, তখন খবর পান বাণরাজা। মাঝপথেই তাদের আটক করে নিজের রাজ্যে নিয়ে এসে অনিরুদ্ধকে কারাগারে বন্দি করেন বাণ। সংবাদ যায় দ্বারকায়। শ্রীকৃষ্ণ সৈন্য নিয়ে বাণ রাজ্য আক্রমণ করেন। নাতিকে উদ্ধার

করতে পুনর্ভবার তীরে কৃষ্ণের সঙ্গে বাণ রাজার তুমুল যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে পরাজিত হয় বাণ। কারাগার থেকে মুক্ত হন অনিরুদ্ধ। বশ্যতা স্বীকার করে ঊষার সঙ্গে অনিরুদ্ধের বিয়ে দেন বাণ রাজা। এবং তারপর শৈব বাণ শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে সন্ধি করে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পাণ্ডবদের পক্ষ অবলম্বন করার অঙ্গীকার করেন। পৌরাণিক এই ঘটনা দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর, তপন, কুশমণ্ডি ও হরিরামপুর ব্লকের নামকরণ ও নানা পৌরাণিক নিদর্শন বহন করে চলেছে।


কথিত আছে, যে রাস্তা দিয়ে অনিরুদ্ধ ঊষাকে হরণ করে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই রাস্তার নাম ঊষাহরণ, যা বর্তমানে কুশমণ্ডি ব্লকের প্রধান একটি রাস্তা। কুশমণ্ডি চৌমাথা থেকে মহিষবাথান হয়ে হরিরামপুর যাবার রাস্তাটিই ঊষাহরণের রাস্তা। আজও সেই রাস্তা নিজের নামকরণের মাধ্যমে ঊষাহরণের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। কথিত আছে, পুনর্ভবার তীরে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে বাণরাজার যুদ্ধে অসংখ্য সৈন্যের মৃত্যু হয়। এত মৃত সৈন্যের দাহ কার্য কী ভাবে হবে? অবশেষে কৃষ্ণ প্রস্তাব দেন, মৃত সৈন্যদের আঙুল কেটে সেই আঙুলের দাহ করে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হোক। কৃষ্ণের প্রস্তাবমতো লক্ষাধিক সৈন্যের আঙুল একজায়গায় স্তূপীকৃত করে পুড়িয়ে দাহ করা হয়। সেই জায়গা পরে করদহ নামে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে তপন ব্লকের করদহ, সেই মিথ বয়ে চলেছে।


তপন ব্লকের তপন দিঘি, হরিরামপুরের বৈরহাট্টার শমীবৃক্ষ, আলতাদিঘি, হাতিডুবা এইসব অঞ্চল এখনও মহাভারতের যুগের নানান কাহিনী নিয়ে বিরাজমান। পৌরাণিক এই বরেন্দ্রভূমির দিনাজপুরের সঙ্গে বাণ গড়ের ইতিহাস মিশে উত্তরবঙ্গের এই জেলাকে পুরাণ ও ইতিহাসের এক মেলবন্ধনে আবৃত করেছে।


দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরেই পুরাণ ও ইতিহাসের এই আশ্চর্য মেলবন্ধন এখনও পর্যন্ত আবৃদ্ধিত হয়েছে। পুরাণে যে স্থানে বাণরাজার রাজদরবার ছিল সেখানেই বাণগড়ের অস্তিত্ব 

প্রমাণ করেছে ইতিহাসবিদেরা। ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ খননকার্য করে প্রমাণ করেছে, গঙ্গারামপুরেই ছিল এক উন্নত নগর সভ্যতা। যা বাণগড়, পরবর্তীতে কোটিবর্ষ বা দেবকোট নামে পরিচিত হয়। এই জনপদটি ছিল সুসজ্জিত। ইট নির্মিত রাস্তা, নর্দমা, কূপ এই সব ধ্বংসাবেশ আজও তা প্রমাণ করে। গঙ্গারামপুর শহরের মধ্যে বাণগড়েই সেই ধ্বংসাবেশ দেখা যায়। সেখানে খনন কার্য করে যে নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে তাতেই প্রমাণ মেলে যে এখানে এক উন্নত নগর সভ্যতা ছিল। ইতিহাসবিদেরা বলেন, পালযুগে এই দেবকোট ছিল উন্নত নগর সভ্যতা। এই দেবকোট মহাবিহারে শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর লেখাপড়া করেছিলেন। সেই জ্ঞান তিনি পরে তিব্বতে ছড়িয়ে দেন। বাংলার মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার এই দেবকোট অধুনা গুঙ্গারামপুর থেকেই প্রথম প্রচলন হয়। তবে এই দেবকোট ১২১০ সালের আগে পর্যন্ত ছিল। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের বিচরণ ক্ষেত্র। তার পরেই এই এলাকায় আসেন ইখতিয়া উদ্দিন মহম্মদ বিন বখতিয়া খিলজি। তিনি এখানে প্রথম মুসলিম ধর্মের প্রসার ঘটান। তৈরি করেন প্রথম

মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্র। গঙ্গারামপুরের অদূরেই রয়েছে ধলদিঘি ও কালদিঘি। কথিত আছে, বাণরাজার স্ত্রী সুড়ঙ্গপথে এসে ধলদিঘির শীতল জলে স্নান করতেন। পৌরাণিক সেই ঘটনার সঙ্গে পরবর্তীতে ইতিহাসের মেলবন্ধন ঘটে। সেই ধলদিঘি এখনও রয়েছে। সেই দিঘির পাড়েই পালযুগের অনুপম স্থাপত্য নিদর্শন মৌলানা আতা শাহের দরগা রয়েছে। অনেকে বলেন, এই আতা শাহের দরগা একাদশ দ্বাদশ শতকে ছিল বৌদ্ধবিহার বা দেবালয়। এই ধলদিঘির পাড়ে আতা শাহের দরগায় পীরের মেলার প্রাচীনত্ব বৈচিত্রে ভরপুর। উরস উৎসবের মাধ্যমে এই মেলার সূচনা করেছিলেন সৈয়দ করম আলি টাটশাহি পীর সাহেব। বাংলার ১২৬০ সালে সিপাহি বিদ্রোহের আগের বছর এই মেলার শুরু হয়। ভারতের রাজধানী তখন ছিল কলকাতা। গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড ক্যানিং। প্রতিবছর মাঘ মাসের ২৫ তারিখে এই উরস উৎসব হয়। উৎসবে খাসির মাংসের পোলাও দিয়ে পীরের সিন্নি দেওয়া হয়। ওই দিনই সামনের হরি মন্দিরে বৈষ্ণব ভক্তরা এসে। | খোল করতাল বাজিয়ে পীর সাহেবকে শ্রদ্ধা জানান। ধলদিঘির ধারে এই উপলক্ষে বিশাল মেলা বসে। বাংলার ইতিহাসে এই মেলা হিন্দু মুসলিমের এক অপূর্ব মেলবন্ধনের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে যুগ যুগ ধরে।


ইতিহাস ও পুরাণ কথায় সমৃদ্ধ বাণগড় আজ অবহেলায় উপেক্ষিত। চারিদিক উন্মুক্ত "বাণগড়ে এখন গুটি কয়েক ইটের স্তূপ ছাড়া কিছু নেই। ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ প্রথম ২০০৭ সালে এখানে খননকার্য চালায়। ২৬ দিন খনন কার্য করার পরে তামার তৈরি নানা যন্ত্রপাতি উদ্ধার হয়। তারপর খননকার্য বন্ধ হয়ে যায়। ফের ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত খননকার্য চালায় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ। এই খননকার্য থেকে যে সব ঐতিহাসিক নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে তাতে স্পষ্ট এই বাণগড়ে তাম্রপ্রস্তর যুগ থেকে মৌর্য, গুপ্ত, পাল যুগ হয়ে মোগল আমল পর্যন্ত উন্নত জনপদ ছিল। এমন ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক সংমিশ্রিত স্থান অবহেলায় পড়ে রয়েছে। চারিদিক উন্মুক্ত বাণগড়ে বর্তমানে রয়েছে কিছু ঐতিহাসিক দুর্গের ভগ্নাবশেষ। তার চারপাশে চাষের জমি। বাণগড় যেমন অরক্ষিত, তেমনই তার অনতিদূরে থাকা ধলদিঘি, কালদিঘির অবস্থাওঁ অথৈবচ। ঊষাহরণের রাস্তায় নেই পিচের প্রলেপ। ভাঙা রাস্তায় পুরাণের সেই গন্ধ আজ উধাও। বৈরহাট্টার শমীবৃক্ষ, যার কোটরে (কথিত আছে) পাণ্ডবরা বনবাসকালে অস্ত্র লুকিয়ে রেখে বিরাট রাজার দরবারে ছদ্মবেশে ছিলেন, সেই শমীবৃক্ষ আজ শীর্ণকায়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ডালপালা হারিয়ে মৃতপ্রায় শমীবৃক্ষের কাছেই বিরাট রাজার হাতিডুবার দিঘির জলও শুষ্কপ্রায়। দিনাজপুরের এমন ইতিহাসবিজড়িত বাণগড় এখন জেলাবাসীর বিস্মৃতির অন্তরালে। পুরাণ কথা মুখে মুখে ফিরলেও এখন তা ফিকে। আর ইতিহাস সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্তির পথে।

লিখেছেন বিহার বিশ্বাস। সোর্স - আনন্দবাজার পত্রিকা।





আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস (মে দিবস নামেও পরিচিত) মে মাসের প্রথম দিনটিকে পৃথিবীর অনেক দেশে পালিত হয়। বেশকিছু দেশে মে দিবসকে লেবার ডে হিসাব...

জেনে নিন মে দিবস এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস - লেবার ডে

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস (মে দিবস নামেও পরিচিত) মে মাসের প্রথম দিনটিকে পৃথিবীর অনেক দেশে পালিত হয়। বেশকিছু দেশে মে দিবসকে লেবার ডে হিসাবে পালন করা হয়। এদিনটি সরকারীভাবে ছুটির দিন। ১৮৮৬ সালের ১লা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে ৮ ঘণ্টা শ্রমদিনের দাবীতে আন্দোলন রত শ্রমিকের ওপর গুলি চালানো হলে ১১ জন শহীদ হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় এইদিন পালিত হয় না। এ ছাড়া এইদিনে আরও কিছু ঘটনা রয়েছে যা আঞ্চলিক ভাবে হয়তো পালিত হয়। 


পূর্বে শ্রমিকদের অমানবিক পরিশ্রম করতে হত, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা আর সপ্তাহে ৬ দিন। বিপরীতে মজুরী মিলত নগণ্য, শ্রমিকরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করত, ক্ষেত্রবিশেষে তা দাসবৃত্তির পর্যায়ে পড়ত। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন, এবং তাদের এ দাবী কার্যকর করার জন্য তারা সময় বেঁধে দেয় ১৮৮৬ সালের ১লা মে। কিন্তু কারখানা মালিকগণ এ দাবী মেনে নিল না। ৪ঠা মে ১৮৮৬ সালে সন্ধ্যাবেলা হালকা বৃষ্টির মধ্যে শিকাগোর হে-মার্কেট নামক এক বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকগণ মিছিলের উদ্দেশ্যে জড়ো হন। তারা ১৮৭২ সালে কানাডায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল শ্রমিক শোভাযাত্রার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এটি করেছিলেন। আগস্ট স্পীজ নামে এক নেতা জড়ো হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলছিলেন। হঠাৎ দূরে দাড়ানো পুলিশ দলের কাছে এক বোমার বিস্ফোরন ঘটে, এতে এক পুলিশ নিহত হয়। পুলিশবাহিনী তৎক্ষনাত শ্রমিকদের উপর অতর্কিতে হামলা শুরু করে যা রায়টের রূপ নেয়। রায়টে ১১ জন শ্রমিক শহীদ হন। পুলিশ হত্যা মামলায় আগস্ট স্পীজ সহ আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়। এক প্রহসনমূলক বিচারের পর ১৮৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর উন্মুক্ত স্থানে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। লুইস লিং নামে একজন একদিন পূর্বেই কারাভ্যন্তরে আত্মহত্যা করেন, অন্যএকজনের পনের বছরের কারাদন্ড হয়। ফাঁসির মঞ্চে আরোহনের পূর্বে আগস্ট স্পীজ বলেছিলেন, "আজ আমাদের এই নি:শব্দতা, তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হবে"। ২৬শে জুন, ১৮৯৩ ইলিনয়ের গভর্ণর অভিযুক্ত আটজনকেই নিরপরাধ বলে ঘোষণা দেন, এবং রায়টের হুকুম প্রদানকারী পুলিশের কমান্ডারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। আর অজ্ঞাত সেই বোমা বিস্ফোরণকারীর পরিচয় কখনোই প্রকাশ পায়নি।
শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের "দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার" দাবী অফিসিয়াল স্বীকৃতি পায়। আর পহেলা মে বা মে দিবস প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দাবী আদায়ের দিন হিসেবে, পৃথিবীব্যাপী আজও তা পালিত হয়।
শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনের উক্ত গৌরবময় অধ্যায়কে স্মরণ করে ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি বছরের ১লা মে বিশ্বব্যাপী পালন হয়ে আসছে “মে দিবস” বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস”। পহেলা মে সেই আন্দোলনের কথাই আমাদের স্বরণ করিয়ে দেয়। ১৮৯০ সালের ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিষ্ট কংগ্রেসে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষনা করা হয় এবং তখন থেকে অনেক দেশে দিনটি শ্রমিক শ্রেনী কর্তৃক উদযাপিত হয়ে আসছে। রাশিয়াসহ পরবর্তীকালে আরো কয়েকটি দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত হবার পর মে দিবস এক বিশেষ তাৎপর্য অর্জন করে। জাতিসংঘে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শাখা হিসাবে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (অরগানাইজেশন বা আই .ত্রল.ও) প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার সমূহ স্বীকৃতি লাভ করে এবং সকল দেশে শিল্প মালিক ও শ্রমিকদের তা মেনে চলার আহবান জানায়।

কল্কি অবতার এবং সনাতন ধর্মঃ একটি সত্যানুসন্ধান “অতঃপর দুইযুগের(কলিযুগ এবং সত্যযুগের) সন্ধিক্ষণে ভগবান কল্কি অবতার রুপে বিষ্ণুযশ নামক ব্...

সনাতন ধর্মের ইতিহাস ( হিন্দু ধর্মের ইতিহাস )

কল্কি অবতার এবং সনাতন ধর্মঃ একটি সত্যানুসন্ধান


“অতঃপর দুইযুগের(কলিযুগ এবং সত্যযুগের) সন্ধিক্ষণে ভগবান কল্কি অবতার রুপে বিষ্ণুযশ নামক ব্যক্তির পুত্র হিসেবে জন্ম গ্রহণ করবেন। ঐ সময় পৃথিবীর প্রায় সমস্ত শাসক অধঃপতিত হয়ে লুটেরা ও ডাকাতের পর্যায়ে নেমে যাবে।”- ভাগবতপুরাণ-১/৩/২৫
এটিও পড়ুন -  পুরাণ পড়ুন ও ডাউনলোড করুন - বাংলায় 
এর অর্থ হল ভগবান এই কলিযুগের শেষের দিকে কল্কি অবতার হিসেবে আবির্ভুত হবেন। তিনি অসাধু লোকদের বিনাশ করে দায়িত্ব শেষ করার পর খুব কম সংখ্যক লোক বেঁচে থাকবে, যারা সৎ এবং ধার্মিক। কল্কি অবতারের পর এই পৃথিবীতে আবার সত্যযুগ শুরু হবে। সনাতন ধর্ম অনুযায়ী কলি যুগের সময়কাল হল ৪,৩২,০০০ বছর। এখন কেবল ৫,০০০ বছর চলছে।তার মানে কল্কি অবতারের জন্ম গ্রহণ করতে এখনও অনেক দেরি!!
এখন এই সময়ের হিসেব নিয়ে অনেকে কাছে একটু খটকা লাগতে পারে। কারণ,প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী আমরা জানি পৃথিবীতে শরীরের গঠনতন্ত্রের দিক থেকে আধুনিক মানুষের সূচনা হয়েছে ২ লক্ষ বছর আগে, এবং মানুষের আচরণে আধুনিকত্ব আসে প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে(উইকিপিডিয়া)। এই হল পৃথিবীতে মানুষের ইতিহাস নিয়ে আমাদের প্রচলিত বৈজ্ঞানিক ধারণা!!
কিন্তু এখানেই শেষে নয়, কিছু প্রশ্ন তবু থেকেই যায়। আসলেই কি আধুনিক মানুষ ২ লক্ষ বছর আগে এসেছিল? নাকি তারও আগে পৃথিবীতে মানুষ ছিল?জট বেধে যায় এখানেই। কারণ আমাদের অনেকেরই অগোচরে ঘটে যাচ্ছে অনেক ঘটনা, যা আমরা জানি না। প্রত্নতত্ববিদেরা এমন কিছু প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন, যা পৃথিবীতে মানুষের ইতিহাসের এই গতানুগতিক ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। প্রত্নতত্ববিধ্যার এই প্রশ্নবিদ্ধ দিকটাকে বলা হয় “Suppressed Archeology”।
**** এখানে ক্লিক করে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন  ****

এই সাইটে গিয়ে অনেক কিছুর মধ্যে পাবেন, ১৯১৩ সালে তানজানিয়ায় পাওয়া একটি মানুষের মাথার কঙ্কাল, যা আধুনিক মানুষের মতো এবং এর বয়স প্রায় ৮ লক্ষ বছর!! ১৮৯৬ সালে বুয়েনসে পাওয়া একটি আধুনিক মানুষের মাথার খুলি, যার বয়স প্রায় ১০ লক্ষ বছর!! ১৮৮৯ সালে আইডাহোতে কাদা দিয়ে তৈরি একটি মানুষের ছোট মুর্ত্তি(পুতুল) পাউয়া যায়, যাটির বয়স প্রায় ২০ লক্ষ বছর!! প্রশ্ন আসে “২০ লক্ষ বছর আগে তো মানুষের অস্তিত্ব থাকার কথা নয়, তবে কে ঐ মুর্ত্তিটি তখন বানালো?” ১৮৬০ সালে ভূবিজ্ঞানী Giuseppe Ragazzoni ইতালিতে একটি আধুনিক মানুষের মাথার খুলি পান, যার বয়স প্রায় ৩০-৪০ লক্ষ বছর। প্রশ্ন আসে “কেন এবং কিভাবে প্রায় ২০ লক্ষ বছর আগে আধুনিক মানুষ ইতালিতে আসল?” বাকিগুলো নিজে লিংক ওপেন করে দেখুন।
**** এখানে ক্লিক করে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন  ****

এই ওয়েব পেইজে পাবেন রাসিয়াতে পাওয়া একটি অ্যালুমিনিয়ামের যন্ত্রাংশ, যার বয়স প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বছর!! ১৮৫১ ম্যাসাচুসেটস এর একটি খনির একটি কয়লার ব্লক থেকে পাওয়া যায় ৫০০ মিলিয়ন বছরের পুরনো হস্তশিল্প। আমেরিকান বিজ্ঞানী Oklahomaএকই জায়গা থেকে আবিষ্কার করেন একটি লোহার পাত্র, যার বয়স হবে প্রায় ৩১২ মিলিয়ন বছর।বেশিদিনের ঘটনা নয়, রাসিয়াতে উদগীর্ণ শিলার মধ্যে পাওয়া যায় একটি মেকানিক্যাল ডিভাইস, যার বয়স প্রায় ৪০০ মিলিয়ন বছর!!! প্রশ্ন আসে, এতো বছর আগে কে এগুলো বানালো? তখন তো মানুষ ছিল না?
**** এখানে ক্লিক করে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন  **** 

এই ওয়েবপেইজটিতে যান। পেইজটির প্রথমেই রয়েছে একটি ধাতব যন্ত্রাংশ, যার আছে ৩০ টি দাতোয়ালা হুইল, যা কি না ভিন্ন ভিন্ন গতিতে ঘুরতে সক্ষম। সময়ের হিসেব করে দেখা যায়, প্রথম যখন গিয়ার আবিষ্কৃত হয়, তারও প্রায় ১০০০ বছর পূর্বে এটি তৈরি!!পরের ছবিতে দেখবেন একটি ব্যাটারি , যা১৯৩৮ সালে ইরাকের বাগদাদে আবিষ্কৃত হয়, পরবর্তিতে ইরাকে একই ধরণের ব্যাটারি আরও কয়েকটি আবিষ্কৃত হয়, এবং সময়ের হিসেব করে দেখা যায়, আগুলো প্রায় ২০০০ বছর আগের পুরনো, কিন্তু আমরা জানি প্রথম ইলেক্ট্রিক ব্যাটারি আবিষ্কার করেন আলেসান্দ্রো ভোল্টা ১৭৯৯ সালে!! ১৮৯৮ সালে মিশরে পাওয়া যায় একটি নিদর্শন, যা গঠনগত দিক থেকে আধুনিক pusher-glider এর সাথে হুবহু মিলে যায়। এটিও প্রায় ২০০০ বছরের পুরনো। দক্ষিণ আমেরিকায় হেলিকপ্টার সদৃশ হস্তশিল্প পাওয়া যায়, যা প্রায় ১০০০ বছরের পুরনো। বৈমানিক ইঞ্জিনিয়াররা এর মতো করে হুবহু বড় হেলিকপ্টার তৈরি করে তাতে হেলিকপ্টারের দরকারি ইঞ্জিন লাগিয়ে দেখেন, তা নির্ভুলভাবে ওড়ে এবং ল্যান্ডিং এও কোনো সমস্যা হয় না। কোস্টারিকা, ভেনেজুয়েলা এবং পেরুতেও একই ধরণের হস্তশিল্প পাওয়া যায়। ক্যালিফোর্নিয়ায় পাওয়া যায় একটি স্পার্ক-প্লাগ, যেই হস্তশিল্পের বয়স প্রায় ৫ লক্ষ বছর!!! লন্ডনে পাওয়া যায় একটি হাতুরি, যার গঠনশৈলী অনেক আধুনিক এবং এটি যে পাথর খন্ড দ্বারা আবৃত, সেটির বয়স প্রায় ১০ মিলিয়ন বছর!!
**** এখানে ক্লিক করে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন  **** 
এই লিংক এও কিছু তথ্য পেতে পারেন।
**** কিংবা এখানে ক্লিক করে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন  ****
 এই লিংকেও পাবেন, তবে এখানে যিনি স্পেসিমেন পেয়েছেন, তিনি তেমনভাবে কারও সাহায্য পান নি সত্য উদ্ধারে আরও এগিয়ে যাবার।
মাইকেল ক্রেমো সম্বন্ধেও একটু খোঁজ করে দেখতে পারেন। খোঁজ নিলে আরও অনেক উদাহরণ মিলবে!
উপরের উদাহরণগুলোকে কি বলবেন? ব্যতিক্রম? ব্যতিক্রম কথাটি কয়টার ক্ষেত্রে মেনে নিবেন? সনাতন ধর্ম অনুযায়ী পৃথিবীতে কোটি কোটি বছর ধরে মানুষের বসবাস, কখনও হয়েছে সভ্যতার উত্তান, কখনও পতন। কতো শহর, কতো লোকালয়, কতো ইতিহাস চাপা পড়েছে মাটির নিচে। সত্যকে চেপে রাখা যায় না।
########
এখন হিন্দুধর্মে সময়ের হিসেব দেখুন।
সত্যযুগ=১৭,২৮,০০০ বছর
ত্রেতাযুগ= ১২,৯৬,০০০ বছর
দ্বাপরযুগ= ৮,৬৪,০০০ বছর
কলিযুগ= ৪,৩২,০০০ বছর
চারযুগ মিলে এক চতুর্যুগ= ৪.৩২ মিলিয়ন বছর
১০০০ চতুর্যুগ= এক “কল্প”= ব্রহ্মার একদিন= ব্রহ্মার একরাত= ৪.৩২ বিলিয়ন বছর
১০০ বছর হল ব্রহ্মার আয়ু= আমাদের এই ব্রহ্মান্ডের আয়ু= ৩১১.০৪ ট্রিলিয়ন বছর।
আবার এক “কল্প” সময়ের মধেয় ১৪ জন মনু আসেন। প্রথম মনুকে বলা হয় স্বায়ম্ভুব মনু এবং তাঁর স্ত্রী হলেন স্বতরুপা(এই ব্রহ্মান্ডের প্রথম নারী ও পুরুষ)। প্রত্যেক মনুর সময়কালকে বলা হয় মন্বন্তর।
১ মন্বন্তর= ৭১ চতুর্যুগ= ৩০৬.৭২ মিলিয়ন বছর
ছয়জন মনু গত হয়েছেন, মানে ৬টি মন্বন্তর চলে গিয়েছে। আমরা আছি সপ্তম মনুর অধীনে যাঁর নাম “বিবস্বত মনু”। তার মানে, এই মনুর পরে আরও ৭ জন মনু আসবেন, আরও ৭ টি মন্বন্তর অতিবাহিত হবে। তারপর পূর্ণ হবে ব্রহ্মার একদিন!! তারপর হবে রাতের শুরু!!
এখন গীতা কি বলে দেখি-
“মনুষ্যমানের সহস্র চতুর্যুগে ব্রহ্মার একদিন হয় এবং সহস্র চতুর্যুগে তাঁর এক রাত হয়।…………। ব্রহ্মার দিনের সমাগমে সমস্ত জীব অব্যক্ত থেকে অভিব্যক্ত হয় এবং ব্রহ্মার রাত্রির সমাগমে সমস্ত জীব আবার অব্যক্তে লয়প্রাপ্ত হয়।”গীতা-৮/১৭-১৮
“…কল্পের শেষে সমস্ত জড় সৃষ্টি আমারই প্রকৃতিতে প্রবেশ করে এবং পুনরায় কল্পের শুরুতে প্রকৃতির দ্বারা আমি তাদের সৃষ্টি করি।”গীতা-৯/৭
“……আমার অধ্যক্ষতার দ্বারা(পরিচালনায়) জড়া প্রকৃতি এই চরাচর বিশ্ব সৃষ্টি করে। প্রকৃতির নিয়মে এই জগৎ পুনঃ পুনঃ সৃষ্টি হয় এবং ধ্বংস হয়।”
বিঃ দ্রঃ হিন্দুদের প্রচার বিমুখতার জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো আজও শুধু ধর্মগ্রন্থের পাতায় সীমাবদ্ধ! অন্যের প্রশ্নের সামনে আমরা নুয়ে পড়ি, না জানার লজ্জায়, অথচ কতো সমৃদ্ধ আমাদের ইতিহাস। সারা জীবন আমরা অন্যের উপহাসের পাত্রই রয়ে গেলাম, শুধু নিজেদের সম্বন্ধে না জানার জন্য। তাই সত্যকে জানুন, জানিয়ে দিন সবাইকে।
হিন্দুধর্ম




সনাতন ধর্মের ইতিহাস

অনেকেই বলে সনাতন ধর্মের ইতিহাস নেই, আবার অনেকেই নানা রকম যুক্তি দিয়ে আসল জিনিসটা এড়িয়ে যায় না জানার কারণে, এই কারণে বিধর্মীরা আমাদের এই সুযোগটা বেশি নেয় এই বলে যে “তোদের ধর্মের তো কোন ইতিহাসই নেই।” আসলেই সনাতন ধর্মের ইতিহাস আছে কিনা, তা আজ দ্বিতীয়বারের মত আমি তুলে ধরার চেষ্টা করব আপনাদের সামনে।
 পুরাণ পড়ুন ও ডাউনলোড করুন - বাংলায় 
 আমরা জেনেছি, আমাদের এই ব্রহ্মান্ডের জীব সৃষ্টির দায়িত্বে নিয়োজিত দেবতা প্রজাপতি ব্রহ্মার(চতুর্মুখ ব্রহ্মার) আয়ু তথা এই ব্রহ্মান্ডের আয়ু হল ১০০ বছর(মহাভারত অনুযায়ী এক বছর= ৩৬০ দিন) মানে আমাদের সময় অনুযায়ী ৩১১.০৪ ট্রিলিয়ন বছর। ব্রহ্মার আয়ু তথা ১০০ বছর শেষ হলে ঘটবে মহাপ্রলয় বা প্রাকৃতিক প্রলয়, এই পুরা ব্রহ্মান্ড(স্থাবর জঙ্গম যা কিছু আছে) ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
ব্রহ্মার ১ মাস= ৩০ দিন, এই ৩০ দিনে ৩০ টি কল্প গত হয়, কল্প বলতে প্রধানত কেবল দিবাভাগকে ফোকাস করা হয়, রাত নয়। ৩০ টি কল্পের ৩০ টি নাম আছে। প্রথম কল্পের নাম শ্বেত-বরাহ কল্প বা অনেক জায়গায় আছে শ্বেত কল্প।
এই কল্পের ১৪ জন মনুর নাম হলঃ স্বায়ম্ভুব, স্বরোচিষ, উত্তম, তামস, রৈবত, চাক্ষুস, বৈবস্বত বা সত্যব্রত, সাবর্ণি, দক্ষসাবর্ণি, ব্রহ্মসাবর্ণি, ধর্মসাবর্ণি, রুদ্রসাবর্ণি, দেবতাসাবর্ণি ও ইন্দ্রসাবর্ণি। কল্প হল ব্রহ্মার দিন বা দিবাভাগ, আরও জানুন, ২ কল্পের সমান সমাম সময়= ব্রহ্মার ১ দিন + ১ রাত; কিন্তু কল্প বলতে কেবল দিবাভাগকেই ফোকাস করা হয়। এখানে মনে রাখা দরকার, প্রত্যেক মন্বন্তর শেষে একটি করে খন্ড প্রলয় ঘটে, এই সময়ে পৃথিবী এবং জীবসমুহ অব্যক্ত বা লয়প্রাপ্ত হয়। আর ব্রহ্মার দিন বা কল্পের শেষে ঘটে নৈমিত্তিক প্রলয়। এক্ষেত্রে গীতা বলে “…কল্পের শেষে সমস্ত জড় সৃষ্টি আমারই প্রকৃতিতে প্রবেশ করে এবং পুনরায় কল্পের শুরুতে প্রকৃতির দ্বারা আমি তাদের সৃষ্টি করি।”গীতা-৯/৭
তাহলে ব্রহ্মার এক বছরে আসেন ৫০৪০ জন মনু, এবং ব্রহ্মার আয়ুষ্কাল তথা এই ব্রহ্মান্ডের আয়ুষ্কাল জুড়ে মোট ৫০৪,০০০ জন মনু আসেন এবং তাঁরা আসেন ভিন্ন ভিন্ন নামে। একেকজন মনুর আয়ুষ্কাল হল ৩০৬.৭২ মিলিয়ন বছর এবং এই সময় হল মহাবিষ্ণুর এক নিঃশ্বাস নিতে যেটুকু সময় লাগে সেইটুকু!!! মহাবিষ্ণুর প্রত্যেকটি শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে সাথে একজন করে মনু আসে আর যায় তথা একটি করে মন্বন্তর শেষ হয়।
আমি বলেছিলাম, এটা সপ্তম মন্বন্তর চলছে আর আমরা সপ্তম মনু “বৈবস্বত মনু” এর অধীনে আছি। তাঁর আরেক নাম সত্যব্রত। তিনি সূর্যদেব বিবস্বানের পুত্র। এ প্রসঙ্গে আমরা গীতার জ্ঞানযোগ নামক ৪র্থ অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকে দেখতে পাই,
“……আমি পূর্বে সূর্যদেব বিবস্বানকে এই অব্যয় নিষ্কাম কর্মসাধ্য জ্ঞানযোগ বলেছিলাম। তিনি তা মানবজাতির জনক বৈবস্বত মনুকে বলেছিলেন। মনু আবার তা নিজ সন্তান ইক্ষাকুকে বলেছিলেন।”
অর্থাৎ অবতার হিসেবে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের আগেও সর্বশেষ প্রায় ১২০.৫৩ মিলিয়ন বছর আগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সূর্যদেব বিবস্বানকে গীতাজ্ঞান দান করেছিলেন। কিন্তু কালের প্রবাহে তা ধীরে ধীরে নষ্ট বা বিলুপ্ত হয়, মানুষ ভুলে যায়, তাই ৫০০০ বছর আগে জন্মগ্রহণ করে আবার অর্জুনকে তিনি এই জ্ঞান দান করেন, এবং ঋষি ব্যাসদেব তা লিপিবদ্ধ করায় একই সাথে সারা পৃথিবীর মানবজাতিও আবার এই পবিত্র গীতা জ্ঞানের সান্নিধ্য লাভ করে।
বিশেষ আকর্ষণঃ
উপরের ডাটা যারা মনযোগ দিয়ে পড়েছেন তারা এখন ব্রহ্মান্ডের বয়স তথা সনাতন ধর্মের বয়স জানুন!
############# ব্রহ্মার ৫০ বছর গত হয়েছে। বর্তমানে তাঁর ৫১ তম বছরের প্রথম দিন বা প্রথম কল্প চলছে। তাই বর্তমান কল্পের নাম শ্বেত-বরাহ কল্প। এই কল্পের আবার ৭ম মন্বন্তর বা বৈবস্বত মন্বন্তর চলছে। এই মন্বন্তরের ২৭ টি চতুর্যুগ বা মহাযুগ গত হয়েছে এবং ২৮ তম চতুর্যুগ বা মহাযুগের সত্য, ত্রেতা এবং দ্বাপরযুগ শেষ হয়েছে। সুতরাং এখন ২৮ তম মহাযুগের কলিযুগ চলমান, যার ৫১১৫ বছর পার হয়ে গিয়েছে, অর্থাৎ এই কলিযুগ শুরু হয়েছে মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব ৩২০১ অব্দের ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যরাতে বা সন্ধিক্ষণে! সুতরাং সনাতন ধর্মের হিসাব মতে আমাদের এই ব্রহ্মান্ডের বয়স হল ১৫৫,৫২১,৯৭১,৯৪৯,১১৫ বছর (২০১৩ সাল পর্যন্ত)!!!!!
কে বলে সনাতন ধর্মের ইতিহাস নেই? তাদের মুখের উপর ছুড়ে দিন!!! নিজে জানুন, অন্যকে জানতে দিন। শেয়ার করুন।
তথ্যসূত্রঃ http://en.wikipedia.org

জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ নতুন এক ধরণের ওষুধ তৈরির এক গবেষণা প্রকল্প শুরু করেছে ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান এ্যাস্ট্রাজেনেকা। বলা ...

ওষুধ তৈরির নতুন প্রযুক্তি

জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ নতুন এক ধরণের ওষুধ তৈরির এক গবেষণা প্রকল্প শুরু করেছে ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান এ্যাস্ট্রাজেনেকা। বলা হচ্ছে এর ফলে ক্যান্সার, হৃদরোগ আর ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে।
ওষুধ তৈরির নতুন প্রযুক্তি


এর ফলে ডাযাবেটিস, হৃদরোগ এবং অনেক ধরণের ক্যান্সারের চিকিৎসায় বৈপ্লবিক অগ্রগতি ঘটবে বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন।

এমন এক পদ্ধতিতে এই ওষুধ তৈরির গবেষণা চলছে যা আগে কখনো হয়নি। ক্রিস্প-আর নামের এই পদ্ধতিতে মানবদেহের জিনের যে উপাদানগুলো এক একটি বিশেষ রোগ সৃষ্টি করে - তা আলাদা করে তার ওপর ওষুধগুলো কাজ করে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হবে।
ক্রিস্পআর প্রযুক্তি

বিবিসির বিজ্ঞানবিষয়ক সংবাদদাতা পল্লব ঘোষ বলছেন, "আপনি একটা আইভি ফুলের লতার কথা চিন্তা করুন। মনে করুন, পুরো লতাটা হচ্ছে যেন একটা ডিএনএ, আর এর পাতাগুলো যেন এক একটা জিন। যখন এই পাতাগুলোর একটা - অর্থাৎ একটা জিন - খারাপ হয়ে যাচ্ছে, তখনই আপনি কোনো রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এখন এই গবেষণা প্রকল্পটার লক্ষ্য হলো - এই লতাগাছটা থেকে নষ্ট হওয়া পাতাটি কেটে নেবার মতনই, ডিএনএ থেকে এই ত্রুটিপূর্ণ জিনগুলো কেটে বের করে নেয়া, এবং তার ওপর এক একটা ওষুধ প্রয়োগ করে পরীক্ষা করে দেখা - যে ঠিক কোন্ ওষুধটা আপনার রোগ সারাতে পারে।"

"বিজ্ঞানীরা এই কাজটা করার জন্য এমন কতগুলো অণু তৈরি করেছেন যা একটা ডিজিটাল কাঁচি বা ছুরির মতো করে কাজ করবে, ওই রোগাক্রান্ত জিনটাকে কেটে বের করে আনতে পারবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো নতুন এই প্রযুক্তিটি সস্তা এবং খুব দ্রুত কাজ করে।"

এ্যান্ট্রাজেনেকা এই গবেষণা করছে ওয়েরকাম ট্রাস্ট স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউটের সাথে। এতে ২০০০ সালের মানব জিনোম প্রকল্প থেকে মানব জিনের গঠন সম্পর্কে যেসব তথ্য জানা গেছে তাই এতে ব্যবহার করা হবে।
এ্যাস্ট্রাজেনেকার গবেষণাগার

এটা প্রয়োগ করে বিজ্ঞানীরা একটি দেহকোষের মধ্যে থাকা জিনগুলোকে বেছে নিয়ে তাতে কাটছাঁট বা পরিবর্তন করতে পারেন।

এই ক্রিস্প-আর প্রযুক্তি সম্পর্কে এবারের বিজ্ঞানের আসরে কথা বলেছেন ভারতের বেঙ্গালুরুতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের মলিকিউলার বায়োফিজিক্সএর অধ্যাপক ড. দীপংকর চ্যাটার্জি।

তিনি বলছেন, ক্রিস্পআর প্রযুক্তিটি আবিষ্কৃত হয়েছে বছর দুয়েক আগে, এবং এটি এতই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার যে এর উদ্ভাবকরা শিগগীরই নোবেল পুরস্কার পাবেন এমন কথাও বলা হচ্ছে।
উৎস-http://www.bbc.co.uk/bengai

মানুষের ব্যবহৃত সবচেয়ে পুরোনো হাতিয়ার যা পাওয়া গেছে তা মোটামুটি ২৫ লাখ বছর আগের। কিন্তু এক নতুন গবেষণার পর বলা হচ্ছে আসলে হয়তোতার অনে...

মানুষ হাতিয়ার ব্যবহার শুরু করেছিল কবে?


মানুষের ব্যবহৃত সবচেয়ে পুরোনো হাতিয়ার যা পাওয়া গেছে তা মোটামুটি ২৫ লাখ বছর আগের।
কিন্তু এক নতুন গবেষণার পর বলা হচ্ছে আসলে হয়তোতার অনেক আগেই প্রাচীন মানুষ হাতিয়ার ব্যবহার শুরু করেছিল।
মানুষ হাতিয়ার ব্যবহার শুরু করেছিল কবে?

নিয়ানডার্থাল মানবের অস্থি
সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে প্রায় ২৫ লাখ বছর আগে পৃথিবী প্রথম মানবজাতির উদ্ভব হয় - যারা দু পায়ের ওপের হাটতে পোরে।
মানুষ যে তাদের মতো অন্য প্রজাতির প্রাণী যেমন বানর, গরিলা বা শিম্পঞ্জীর চাইতে শ্রেষ্ঠ - তার একটা বড় কারণ হলো তাদের হাতের আঙুলের গঠন - যা দিয়ে তারা অনেক বেশি দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে, উন্নত ধরণের যন্ত্র বানাতে পারে।
যুক্তরাজ্যের কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ট্রেসি কিভেল এমন একটা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন যা দিয়ে মানুষের পূর্বপুরুষদের হাতে হাড়ের গঠন বিশ্লেষণ করা যায় - এবং তা দিয়ে তিনি দেখতে পেয়েছেন যে মানুস প্রথম হাতিয়ার ব্যবহার শুরা করেছিল আমরা যা অনুমান করি তার অনেক আগেই।
ড. কিভেল মনে করেন, মানুষের হাড়ের গঠনের এই পরীক্ষা প্রাচীন মানুষ সম্পর্কে গবেষণায় আরো নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
এবারের বিজ্ঞানের আসর পরিবেশন করেছেন পুলক গুপ্ত।
উৎস -http://www.bbc.co.uk/bengali

রামসাগর কোন সাগর নয়, এটি আকার ও সৌন্দয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় দীঘি। দিনাজপুর শহর থেকে ৫ মাইল দক্ষিনে অবস্থিত এ দীঘিটি শুধু জ...

রামসাগর - সবচেয়ে বড় দীঘি

রামসাগর - সবচেয়ে বড় দীঘি
রামসাগর কোন সাগর নয়, এটি আকার ও সৌন্দয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় দীঘি। দিনাজপুর শহর থেকে ৫ মাইল দক্ষিনে অবস্থিত এ দীঘিটি শুধু জলাধার বা ‌ঐতিহাসিক কীর্তি নয়, এক বিশাল প্রাকৃতিক সৌন্দয়ের অধিকারি অর্থাৎ একটি মনোরম পার্ক। পলাশী যুদ্ধের অনতিপূর্বে দিনাজপুরের বিখ্যাত রাজা রামনাথ দীঘিটি খনন করান এবং তার নামেই এর নামকরণ করা হয়।
পাশ্ববর্তী গ্রামগুলোর পানির চাহিদা পূরণের জন্য দীঘিটি খনন করা হয়। বলা হয় যে সেসময় (১৭৫০-১৭৫৫) এ অঞ্চলে প্রচন্ড খরা ও দুর্ভিক্ষ চলছিল ‌এবং রাজা রামনাথ "কাজের বিনিময়ে খাদ্য" কর্মসূচীর মাধ্যমে মানুষদের সাহায্য করেন এবং দীঘিটি খনন করান। এতে প্রায় ১৫ লক্ষ শ্রমিক অংশ নেয় এবং সেসময়ের মূদ্রায় মোট ব্যয় দাড়ায় ৩০,০০০ টাকা।

রামসাগর নামের দীঘিটির চারপাশে সবুজ গাছ-পালায় ভরা। দীঘিটি উত্তর দক্ষিন লম্বা। দীঘিটির জলভাগের দৈর্ঘ্য ১০৩১ মিটার, প্রস্থ ৩৬৪ মিটার ও গভীরতা ৯ মিটার। দক্ষিন দিকের চেয়ে উত্তর দিকের গভীরতা বেশি। দীঘির প্রধান পাকা ঘাট পশ্চিম পাড়ের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত যা সুপ্রশস্থ। এই ঘাট এর দৈর্ঘ্য ১৫০ ফুট প্রস্থ ৬০ ফুট। এছাড়া উত্তর ও দক্ষিন দিকেও একটি করে ঘাট রয়েছে, কিন্তু এই ঘাটগুলি আকারে ছোট।

দীঘির চারদিকে বেশকিছু উচুঁ-উচুঁ টিলা ছিল, তবে এই উচুঁ পাহাড় গুলোর সব আজ আর দেখা যায় না। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এর উচু পাহাড়গুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উত্তর-পূর্ব কোনের সবচে উচুঁ পাহাড়টি আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই পাহাড়টির উচ্চতা সমতল থেকে ৪০ ফুট উচুঁ। দীঘির উত্তর দিকে একটা ধংসম্তপ দেখা যায়, এটা নিয়ে মনুষের নানা প্রশ্ন-নানা কৌতুহল। কেউ বলে এটা মন্দির আবার কেউ বলে রাজার বিশ্রামাগার। দীঘির পশ্চিম পাড়ের ঠিক বিপরীতে একটি ছোটখাট কৃত্রিম চিড়িয়াখানা আছে এবং তাতে চিত্ত বিনোদনের নানা সামগ্রী রয়েছে। উত্তর কোন ও চিড়িয়াখানার মাঝখানে একটি মসজিদও রয়েছে। দীঘির চারদিকে লোকজন হাঁটার জন্য ইট বিছান পথ,মানুষ বসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় সুব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসে রামসাগরের প্রাকৃতিক সৌন্দয় উপভগের জন্য, আবার অনেক মানুষ আসে বনভোজনের জন্য। রামসাগরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন, চোখে না দেখলে।

রামসাগর পর্যটন বিভাগের তত্বাবধানে রয়েছে। পর্যটন কর্পোরেশন এর শ্রী বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ও একটি মনোরম ও আধুনিক বিশ্রামাগার স্থাপন করেছে।

বর্তমান রাজবাড়ি দিনাজপুর শহরের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ধ্বসপ্রাপ্ত নিদর্শন মাত্র। আদিতে প্রতিরক্ষা পরিখা ও উঁচু প্রাচীর বেষ্টিত দিনাজপু...

এক নজরে দিনাজপুর রাজবাড়ী - বাংলাদেশ

বর্তমান রাজবাড়ি দিনাজপুর শহরের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ধ্বসপ্রাপ্ত নিদর্শন মাত্র। আদিতে প্রতিরক্ষা পরিখা ও উঁচু প্রাচীর বেষ্টিত দিনাজপুর রাজবাড়ির বর্তমান পরিত্যক্ত ধ্বংসস্তূপে প্রবেশের জন্য পশ্চিম দিকে একটি উঁচু খিলানপথ রয়েছে। প্রবেশপথের বাম দিকে মূল প্রাসাদ এলাকার মধ্যে খোলা জায়গায় রয়েছে একটি কৃষ্ন মন্দির। ডান দিকে রয়েছে প্রাসাদের বহির্বাটির কিছু ধ্বংসাবশেষ ও অপর একটি প্রবেশপথ যা একটি বর্গাকার চত্বরে উন্মুক্ত হয়েছে।
এটিও পড়ুন -ইংলিশ শেখার দুর্দান্ত বই - ডাইনামিক মেমরি ( ২৫% ছার )

বর্গাকার চত্বরটির পূর্ব পার্শ্বে রয়োছে চত্বরমুখী সমতল ছাদবিশিষ্ট একটি মন্দির।চারটি সেমি-কোরিনথিয়ান স্তম্ভের উপর মন্দিরের সামনের বারান্দা এবং অপর এক সেল কলামের উপর মূল হল ঘরটির ছাদ ন্যস্ত।
এক নজরে দিনাজপুর রাজবাড়ী


দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাসাদটি এখন শুধুই পরিত্যক্ত ইটের সমাহার।ভবনগুলি ভেঙ্গে খন্ড খন্ড হয়ে যাওয়ার শেষ পর্যায়ে উপনীত। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজা ও জমিদার রাজবাড়ির বিভিন্ন অংশ নির্মাণ করলেও মূল প্রাসাদ ভবনটি তিনটি প্রধান মহলে বিন্যস্ত।এগুলি আয়না মহল, রানী মহল ও ঠাকুরবাড়ী মহল হিসেবে পরিচিত।প্রাসাদ এলাকায় বেশ কয়েকটি মন্দি,বেস্ট হাউস, দাতব্য চিকৎসালয়,দিঘি এবং বিভিন্ন কর্মচারী ও পোষ্যদের আবাসস্থল নির্মণ করা হয়েছিল।

এ সকল দালান-কোঠা এবং পূর্ব ও দক্ষিণের দুটি বৃহৎ দিঘি,পরিখা,বাগান,একটি বিলুপ্ত চিরিয়াখানা,একটি টেনিস কোর্ট,কাচারি ও কুমার হাউস-সহ রাজবাড়িটি প্রায় ১৬.৪১ একর নিয়ে বিস্তৃত।মূল মহলও এর সংলগ্ন পরিখা সম্ভবত অষ্টাদশ শতাব্দীতে মহারাজা প্রাণনাথ ও তার পোষ্যপুত্র রামনাথ নির্মাণ করেছিলেন।প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিল ইউরোপীয়, মুসলিম ও হিন্দু রীতির এক অদ্ভুত সংমিশ্রণে, যা খুব একটা দৃষ্টিনন্দন হয় নি।রামডাঙ্গা নামক দুটি সমান্তরাল পরিখা প্রাসাদটি ঘিরে ছিল।পরিখাটি সম্ভবত আলীবর্দী খান এর শাসনামলে রংপুরের ফৌজদার সৈয়দ আহমেদ খানের আক্রমণের পরই রামনাথ খনন করিয়েছিলেন।

আয়না মহল নামে পরিচিত পূর্বমূখী দ্বিতল মূল প্রাসাদটির অধিকাংশই এখন ধসে পড়েছে। এ ধ্বংসাবশেষে অথবা টিকে থাকা সামান্য কিছু নিদর্শনের মাঝে বা চুর্ণ-বিচুর্ণ পাথরের কোথাও এর পূর্বের কাচের মোজাইক চোখে পড়ে না।পূর্বেদিকের ৪৫.৭২ মিটার প্রশস্ত একটি অভিক্ষিপ্ত বারান্দা রয়েছে। ব্যালকনির উভয় পার্শ্বে দুটি প্রশস্ত প্যাঁচানো সিড়ি দোতালায় উঠে গেছে।সম্মুখভাগে অভিক্ক্ষপ্ত বারান্দাটির নিচে রয়েছে গ্রিক আয়োনিক রীতির স্তম্ভের সারি। জোড়ায় জোড়ায় স্থাপিত স্তম্ভেগুলিতে আবার রয়েছে গোলাকৃতির ব্যান্ড। একটি মাত্র আয়তার প্যানেল ব্যতীত উপরের প্যারাপেটটি সমতল।প্যারাপেট থেকে সামান্য উচু আয়তাকার প্যারাপেটিতে রয়েছে রাজকীয় চিহ্নের মাঝে রিলিফ করা মুখোমুখি দুটি হাতি ও মুকুট-এর নকশা।মহলটির মেঝে সাদা-কালো মার্বেল পাথর দ্বারা এবং ছাদ, বিশেষ করে দরবার হল,জলসা হল,তোষাখানা ও পাঠাগার, স্টাকো পদ্ধতিতে চকচকে করা হয়েছে। পশ্চিমের মূল প্রাসাদ ব্লকের পেছোনে রয়েছে রানী মহল ও ঠাকুরবাড়ি মহলের দ্বিতল বর্গাকার ব্লক। একদা এ সমস্ত অসাধারন সুন্দর নিদর্শনের রিলিফ,খোদিত নকশা ও সমস্ত মূল্যবান বস্তই বর্তমানে খুলে নেওয়া হয়েছে।
উৎস-https://dinajpur.net

মহামতি আলেকজান্ডার (Alexander the great) (জন্ম - জুলাই খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫৬, মৃত্যু জুন ১১, খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩)পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সফল সামর...

মহামতি আলেকজান্ডার

ইতিহাস
মহামতি আলেকজান্ডার (Alexander the great) (জন্ম - জুলাই খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫৬, মৃত্যু জুন ১১, খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩)পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সফল সামরিক প্রধান। তিনি তৃতীয় আলেকজান্ডার বা মেসিডনের রাজা হিসেবেও পরিচিত। তিনি ছিলেন মেসিডোনিয়ার শাসনকর্তা। মেসিডোনিয়া বর্তমান গ্রীসের অন্তর্গত একটি অঞ্চল। তার পিতা ফিলিপ ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা। তার মৃত্যুর পূর্বে তিনি পরিচিত পৃথিবীর বেশির ভাগ জয় (টলেমির মানচিত্র অনুযায়ী) করেছিলেন। আলেকজান্ডার তার সামরিক কৌশল ও পদ্ধতির জন্য বিশ্ব বিখ্যাত। তিনি পারস্যে অভিশপ্ত আলেকজান্ডার নামেও পরিচিত, কারণ তিনি পারস্য সাম্রাজ্য জয় করেন এবং এর রাজধানী পারসেপলিস ধ্বংস করেন। তিনি ফার্সি ভাষায় "ইস্কান্দর, মধ্য পশ্চিমা স্থানে যুল-কারনাইন, আরবে আল-ইস্কান্দার আল কাবের", উর্দুতে সিকান্দার-এ-আজম, পস্তুতে স্কান্দর, হিব্রুতে "আলেকজান্ডার মোকদন, আরমেনিয়ানয়ে ট্রে-কারনাইয়া"। তার এজাতীয় কিছু নামের অর্থ "দুই শিং বিশিষ্ট" (যুল-কারনাইন, ট্রে-কারনাইয়া), আবার উর্দু ও হিন্দিতে সিকান্দার যার অর্থ পারদর্শি" বা অত্যন্ত পারদর্শি।
আলেকজান্ডারের পিতা দ্বিতীয় ফিলিপ তার শাসনামলে গ্রিসের নগর রাষ্ট্রগুলোকে নিজের শাসনাধীনে আনেন। আলেকজান্ডার নিজেও এই নগররাষ্ট্রগুলিকে একত্রিত করতে অভিযান চালান কারণ ফিলিপের মৃত্যুর পর এগুলো বিদ্রোহ করেছিল। এরপর আলেকজান্ডার একে একে পারস্য, আনাতোলিয়া, সিরিয়া, ফোনিসিয়া, জুডিয়া, গাজা, মিশর, ব্যাক্ট্রিয়া এবং মেসোপটেমিয়া জয় করেন। তার সাম্রাজ্য মেসিডোনিয়া থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পিতার মৃত্যুর পর আলেকজান্ডার পশ্চিমে অভিযান চালান ইউরোপ জয় করার জন্য। এরপর তিনি পূর্বে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেন, কারণ শৈশবে তার শিক্ষক বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক, বিজ্ঞানী এরিস্টোটল তাকে বলেছিলেন কোথায় ভূমি শেষ হয় এবং মহাসাগর শুরু হয়। আলেকজান্ডার তার সেনাবাহিনী ও প্রশাসনে বিদেশী (বিশেষ করে যারা গ্রিক বা মেসিডোনিয়ান নয়) ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করেন। এর মধ্যে কিছু জ্ঞানী ব্যক্তি তাকে "একত্রিকরণ"-এর ব্যাপারে ধারণা দেয়। তিনি তার সেনাবাহিনীতে বিদেশীদের সাথে বিবাহ উৎসাহিত করেন এবং নিজেও বিদেশী মেয়েদের বিয়ে করেন। প্রায় ১২ বছরের সামরিক অভিযানের পর আলেকজান্ডার মৃত্যুবরণ করেন। ধারণা করা হয় হয়ত তিনি ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড অথবা ভাইরাল এনকেফালাইটিস্‌ এর আক্রান্ত হয়ে মারা যান। হেলেনেস্টিক যুগে তার অভিযানের কাহিনী লোকের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। আলেকজান্ডারের অভিযানের ফলে বিভিন্ন সভ্যতার মিলন ঘটে (মিশর, গ্রিক, পারস্য, ভারতীয়) এক নতুন সভ্যতার শুরু হয়। এই সভ্যতাই হেলেনেস্টিক সভ্যতা। গ্রিক ও গ্রিসের বাইরের বিভিন্ন সভ্যতায় আলেকজান্ডার ইতিহাসে, সাহিত্যে, পুরাণে জীবিত হয়ে আছেন।
তথ্য সুত্র - উইকিপিডিয়া

Advertisement